বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম. আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ফরজ গোসলের নিয়ম
Table of Contents
ফরজ গোসলের নিয়ম,ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া,ফরজ গোসলের নিয়ম ও নিয়ত,ফরজ গোসলের দোয়া, আমাদের এই পোস্টটি পড়লে আপনার এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর একসাথে জানতে পারবেন।
ফরজ গোসলের নিয়ম
পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালবাসেন।
এটি নারী-পুরুষের যৌ’ন মিলন, স্বপ্নদোষ বা যে কোনো উপায়ে বী’র্য’পা’ত হলে।
সন্তান প্রসবের পর নেফাসের র’ক্ত বন্ধ হলে পবিত্র হওয়ার জন্য নারীদের গোসল করা ফরজ।
মাসিক বন্ধ হওয়ার পর নারীদের পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ।
স্বামী-স্ত্রী স’হ’বা’স করলে স্বামী-স্ত্রী দুজনে গোসল করে নেয়া আবশ্যক। এ গোসল না করা পর্যন্ত নাপাকী অবস্থায় থাকে।ফরজ গোসলে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।
ফরজ গোসলের নিয়ম
নিয়ত
- প্রথমে মনে মনে পবিত্রতা লাভের উদ্দেশ্যে গোসল করার নিয়ত করুন।
- “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ফরজ গোসল করছি।”
শুরু
- “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বলে গোসল শুরু করুন।
- ডান হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিন।
- বাঁ হাত দিয়ে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করুন।
- পানি দিয়ে কাপড়ের নাপাকি ধুয়ে ফেলুন।
- অজু করার নিয়ম অনুযায়ী অজু করে নিন।
গোসলের তিনটি কাজ
- কুলি
- পানি মুখের ভেতর দিয়ে ভালোভাবে কুলি করুন।
- মুখের ভেতরের সকল অংশে পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।
- নাকে পানি দেওয়া
- ডান হাত দিয়ে পানি নাকে টেনে নিন।
- পানি ভেতরে ঢুকিয়ে বাম নাকে বের করে দিন।
- সারা শরীরে পানি দেওয়া
- ডান পা থেকে শুরু করে সারা শরীরে পানি দিন।
- চুলের গোড়া, কানের ভেতর, নাভির নিচের অংশ, পায়ের আঙ্গুলের ফাঁক – সব জায়গায় পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।
- বাঁ পা শেষে ধুয়ে ফেলুন।
শেষে
- গোসল শেষে ডান হাত দিয়ে শরীরের পানি মুছুন।
- “আস্তাগফিরুল্লাহ” তিনবার বলুন।
- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির” তিনবার বলুন।
- “সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” তিনবার বলুন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- গোসলের সময় পানি অপচয় করা যাবে না।
- গোসলের সময় লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা উচিত।
- পুরুষদের দাড়ি ও মাথার চুল গোড়ায় সম্পূর্ণ ভালোভাবে ভিজতে হবে।
- নারীদের চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো।
- নেল পালিশ, রং বা সুপার গ্লু ইত্যাদি যা শরীরে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, তা উঠিয়ে নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে
- পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের চুল ভালোভাবে ভিজতে হবে।
- এই নিয়মে গোসলের পর নতুন করে আর ওজুর দরকার নাই, যদি ওজু না ভাঙ্গে।
ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া
- “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বলে গোসল শুরু করুন।
- ডান হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিন।
- বাঁ হাত দিয়ে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করুন।
- পানি দিয়ে কাপড়ের নাপাকি ধুয়ে ফেলুন।
- অজু করার নিয়ম অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ অজু করে নিন।
গোসলের তিনটি কাজ
- কুলি
- পানি মুখের ভেতর দিয়ে ভালোভাবে কুলি করুন।
- মুখের ভেতরের সকল অংশে পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।
- নাকে পানি দেওয়া
- ডান হাত দিয়ে পানি নাকে টেনে নিন।
- পানি ভেতরে ঢুকিয়ে বাম নাকে বের করে দিন।
- সারা শরীরে পানি দেওয়া
- ডান পা থেকে শুরু করে সারা শরীরে পানি দিন।
- চুলের গোড়া, কানের ভেতর, নাভির নিচের অংশ, পায়ের আঙ্গুলের ফাঁক – সব জায়গায় পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।
- বাঁ পা শেষে ধুয়ে ফেলুন।
শেষে
- গোসল শেষে ডান হাত দিয়ে শরীরের পানি মুছুন।
- “আস্তাগফিরুল্লাহ” তিনবার বলুন।
- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির” তিনবার বলুন।
- “সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” তিনবার বলুন।
গোসলের দোয়া
- গোসলের সময় নিম্নলিখিত দোয়াগুলো পড়া যেতে পারে:
1. গোসল শুরু করার সময়
“আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”
2. অজু শেষ করার পর
“আল্লাহুম্মাগফিরলি জুনুবি ওয়া তাহহির লি ফারজি ওয়া বা’স লি ‘আমালি”
3. গোসল শেষ করার সময়
“আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। অল্লাহুম্মা জ’আলনি মিনাত্তাওয়াবীনা ওয়া জ’আলনি মিনাল মুতাতাহহিরীনা”
ফরজ গোসলের নিয়ম কয়টি
ফরজ গোসলের নিয়ম মোট তিনটি:
- কুলি: পানি মুখের ভেতরে দিয়ে ভালোভাবে কুলি করতে হবে। মুখের ভেতরের সকল অংশে পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।
- নাকে পানি দেওয়া: ডান হাত দিয়ে পানি নাকে টেনে নিতে হবে এবং পানি ভেতরে ঢুকিয়ে বাম নাকে বের করে দিতে হবে।
- সারা শরীরে পানি দেওয়া: ডান পা থেকে শুরু করে সারা শরীরে পানি দিতে হবে। চুলের গোড়া, কানের ভেতর, নাভির নিচের অংশ, পায়ের আঙ্গুলের ফাঁক – সব জায়গায় পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। বাঁ পা শেষে ধুয়ে ফেলতে হবে।
উল্লেখ্য:
- গোসলের আগে পবিত্রতা লাভের উদ্দেশ্যে নিয়ত করতে হবে।
- অজু করার নিয়ম অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ অজু করে নিতে হবে।
- গোসলের সময় পানি অপচয় করা যাবে না।
- লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা উচিত।
- পুরুষদের দাড়ি ও মাথার চুল গোড়ায় সম্পূর্ণ ভালোভাবে ভিজতে হবে।
- নারীদের চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো।
- নেল পালিশ, রং বা সুপার গ্লু ইত্যাদি যা শরীরে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, তা উঠিয়ে নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি।
ফরজ গোসলের নিয়ম হাদিস
ফরজ গোসলের নিয়ম: হাদিসের আলোকে
ফরজ গোসলের নিয়ম সম্পর্কে হাদিসে বিভিন্ন নির্দেশাবলী পাওয়া যায়। নীচে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ হাদিসের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো:
১. নিয়ত
- হাদিস: “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গোসল করে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল পাপ ধুয়ে যায়।” (তিরমিযী)
- ব্যাখ্যা: গোসল শুরু করার আগে মনে মনে পবিত্রতা লাভের উদ্দেশ্যে নিয়ত করতে হবে।
২. কুলি
- হাদিস: “তোমাদের কারো মুখে যদি খাবারের অংশ লেগে থাকে, তাহলে সে যেন কুলি করে।” (মুসলিম)
- ব্যাখ্যা: পানি মুখের ভেতরে দিয়ে ভালোভাবে কুলি করতে হবে। মুখের ভেতরের সকল অংশে পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।
৩. নাকে পানি দেওয়া
- হাদিস: “তোমরা নাকে পানি দাও, যদি না তোমরা অসুস্থ থাকো।” (আবু দাউদ)
- ব্যাখ্যা: ডান হাত দিয়ে পানি নাকে টেনে নিতে হবে এবং পানি ভেতরে ঢুকিয়ে বাম নাকে বের করে দিতে হবে।
৪. সারা শরীরে পানি দেওয়া
- হাদিস: “তোমরা তোমাদের মাথা ভিজাও এবং চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছে দাও।” (মুসলিম)
- ব্যাখ্যা: ডান পা থেকে শুরু করে সারা শরীরে পানি দিতে হবে। চুলের গোড়া, কানের ভেতর, নাভির নিচের অংশ, পায়ের আঙ্গুলের ফাঁক – সব জায়গায় পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। বাঁ পা শেষে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৫. গোসলের সময় পানি অপচয় করা যাবে না।
- হাদিস: “তোমরা অপচয় করো না, এমনকি যদি তুমি প্রবাহিত নদীর তীরেও গোসল করো।” (তিরমিযী)
৬. লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা উচিত।
- হাদিস: “যখন তুমি গোসল করবে, তখন তোমার লজ্জাস্থান ঢেকে রাখ।” (তিরমিযী)
৭. পুরুষদের দাড়ি ও মাথার চুল গোড়ায় সম্পূর্ণ ভালোভাবে ভিজতে হবে।
- হাদিস: “তোমরা তোমাদের দাড়িতে পানি পৌঁছে দাও এবং মাথার চুল ভিজাও।” (মুসলিম)
৮. নারীদের চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো।
- হাদিস: “নারী যখন গোসল করে, তখন সে যেন তার চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে দেয়।” (আবু দাউদ)
প্রতিদিন গোসল করার নিয়ম
1. গোসলের সময়
- সকালে ঘুম থেকে উঠে: সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করলে সারাদিন তাজা ও ফুরফুরে অনুভূতি হয়।
- বিকেলে: বিকেলে ঘামাক্ত হলে বা বাইরে থেকে এসে গোসল করলে শরীরের ময়লা ও ঘাম পরিষ্কার হয়।
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে: রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গোসল করলে দিনের ক্লান্তি দূর হয় এবং ঘুম ভালো হয়।
2. গোসলের নিয়ম
- পানি: ঠান্ডা বা হালকা গরম পানি ব্যবহার করা উচিত। অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
- সাবান: ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান ব্যবহার করা উচিত। শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ঘষা: ত্বককে জোরে ঘষা উচিত নয়। এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
- সময়: দীর্ঘক্ষণ গোসল করা উচিত নয়। এতে ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- শ্যাম্পু: সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত।
- কন্ডিশনার: শুষ্ক ও রুক্ষ চুলের জন্য কন্ডিশনার ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ময়েশ্চারাইজার: গোসলের পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
3. কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- পানি অপচয় করা যাবে না।
- লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা উচিত।
- নারীদের মাসিক ঋতুর সময় গোসল করার বিশেষ নিয়ম রয়েছে।
- শিশুদের গোসল করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
4. কিছু টিপস
- গোসলের আগে হালকা ব্যায়াম করলে ঘাম বেরিয়ে শরীর পরিষ্কার হতে সাহায্য করে।
- গোসলের সময় গান শুনলে বা মনোরম কিছু ভাবলে মন ভালো থাকে।
- গোসলের পর হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য
- উপরোক্ত নিয়মগুলো সাধারণ নির্দেশিকা। ব্যক্তির ত্বকের ধরন ও অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভর করে গোসলের নিয়মে কিছু পরিবর্তন হতে পারে।
- গোসলের বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে একজন চর্ম বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত।