বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম. আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে সুদখোরের শাস্তি।
সুদখোরের শাস্তি,সুদখোরের জানাজা,সুদ খেলে কি নামাজ হবে,সুদখোরের পরিণতি,সুদখোরের ঘটনা,সুদখোর ব্যক্তিকে কেন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না,সুদখোরের,আমাদের এই পোস্টটি পড়লে আপনার এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর একসাথে জানতে পারবেন।
কিয়ামতের দিন সুদখোরের শাস্তি
হাদিসে বর্ণিত আছে,
“রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুদখোর, সুদদাতা, সুদের সাক্ষী এবং সুদের লেখক সকলেই জাহান্নামে যাবে।'” (বুখারি, মুসলিম)
আল্লাহ বলেন,
“যারা সুদ খায়, তারা যেন শুধুমাত্র আগুনের মধ্যে জ্বলছে। তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তা থেকে দূরে থাকবে। আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৫)
হাদিসে বর্ণিত আছে,
“রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুদখোর ব্যক্তি কিয়ামতের দিন এমনভাবে উঠবে যে তার মাথা থেকে আগুনের ধোঁয়া বের হচ্ছে।'” (ইবনে মাজাহ)
Table of Contents
সুদখোরের শাস্তির মধ্যে রয়েছে
- আগুনে পুড়ানো হবে।
- আল্লাহর সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকবে।
- আল্লাহর দিকে তাকানো থেকে বিরত থাকবে।
- পবিত্র করা হবে না।
- যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে।
সুদখোরের শাস্তি এড়াতে হলে সুদ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
সুদখোর ব্যক্তিকে কেন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না
ইসলামে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সুদ হল এমন একটি লেনদেন যেখানে একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে অর্থ বা সম্পদ ধার দেয় এবং তার বিনিময়ে অতিরিক্ত কিছু দাবি করে। ইসলামে সুদকে একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুদখোর ব্যক্তিকে আল্লাহ ক্ষমা না করার কারণগুলি নিম্নরূপ:
- সুদ হল একটি অবিচারমূলক লেনদেন। সুদখোর ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির প্রয়োজনকে কাজে লাগিয়ে তার সম্পদের উপর অতিরিক্ত অধিকার দাবি করে। এটি একটি অবিচারমূলক কাজ।
- সুদ হল একটি অস্থিরতা সৃষ্টিকারী শক্তি। সুদ অর্থনৈতিক ভারসাম্যকে নষ্ট করে এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
- সুদ হল একটি আত্মকেন্দ্রিকতা সৃষ্টিকারী শক্তি। সুদখোর ব্যক্তি অন্যের কষ্টের দিকে নজর না দিয়ে নিজের স্বার্থে কেবলমাত্র অর্থের দিকে মনোযোগ দেয়। এটি একটি আত্মকেন্দ্রিকতা সৃষ্টি করে।
সুদখোর ব্যক্তি যদি তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয় এবং তা থেকে তওবা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করতে পারেন। তবে, সুদখোর ব্যক্তি যদি তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হয় এবং তা থেকে তওবা না করে, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না।
আল্লাহ বলেন,
“যারা সুদ খায়, তারা যেন শুধুমাত্র আগুনের মধ্যে জ্বলছে। তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তা থেকে দূরে থাকবে।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৫)
“যারা সুদ খায়, তারা যেন পাপী ব্যক্তির কাছ থেকে ঝুলন্ত কাপড় খায়। তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তা থেকে দূরে থাকবে।” (সূরা নিসা, আয়াত ১৬০)
সুতরাং, সুদ থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। সুদ একটি গুরুতর অপরাধ যা আল্লাহর কাছে ক্ষমার অযোগ্য।
সুদখোরের জানাজা
সুদখোরের জানাজা
ইসলামী শরীয়তে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সুদ হল এমন একটি লেনদেন যেখানে একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে অর্থ বা সম্পদ ধার দেয় এবং তার বিনিময়ে অতিরিক্ত কিছু দাবি করে। ইসলামে সুদকে একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সুদখোরের জানাজার বিধান
সুদখোরের জানাজা পড়ার বিষয়ে ইসলামী ফিকহের বিভিন্ন মাযহাবে বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে, বেশিরভাগ ফিকহবিদদের মতে, সুদখোরের জানাজা পড়া জায়েজ। তবে, জানাজায় শরিক হওয়ার ব্যাপারে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিবেচনা ও বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে।
সুদখোরের জানাজার পদ্ধতি
সুদখোরের জানাজার পদ্ধতি অন্যান্য মুসলমানের জানাজার মতোই। তবে, জানাজার নামাজের সময় ইমাম নিম্নলিখিত দোয়া পড়তে পারেন:
“اللهم اغفر لعبدِكَ (اسم الميت) وارحمه وعافه واعف عنه واكرم نزله ووسع مدخله واغسله بالماء والثلج والبرد ونقه من الذنوب والخطايا كما ينقى الثوب الأبيض من الدنس اللهم أبدله دارا خيرا من داره وأهلا خيرا من أهله وادخله الجنة وأعذه من عذاب القبر ومن عذاب النار”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনার বান্দা (মৃত ব্যক্তির নাম)-কে ক্ষমা করুন, তার প্রতি দয়া করুন, তাকে নিরাপত্তা দিন, তাকে ক্ষমা করুন, তার আগমনস্থলকে সম্মান করুন, তার প্রবেশদ্বারকে প্রশস্ত করুন এবং তাকে পানি, বরফ এবং শীতলতা দিয়ে ধৌত করুন। তাকে পাপ ও অপরাধ থেকে এমনভাবে পবিত্র করুন যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পবিত্র হয়। হে আল্লাহ! তাকে তার ঘর থেকে ভালো ঘর, তার পরিবার থেকে ভালো পরিবার দান করুন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং তাকে কবরের আযাব ও জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।”
সুদখোরের জানাজায় শরিক হওয়ার ব্যাপারে কিছু কথা
সুদখোরের জানাজায় শরিক হওয়ার ব্যাপারে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিবেচনা ও বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে। তবে, জানাজায় শরিক হওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:
- জানাজা হল একজন মৃত ব্যক্তির জন্য শেষ বিনয়। সুদখোরের জানাজায় শরিক হওয়ার মাধ্যমে আমরা তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছি।
- জানাজা হল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। সুদখোরের জানাজায় শরিক হওয়ার মাধ্যমে আমরা ইসলামের বিধান মেনে চলছি।
- জানাজা হল একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। সুদখোরের জানাজায় শরিক হওয়ার মাধ্যমে আমরা মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
অবশ্যই, সুদখোরের জানাজায় শরিক হওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিও মনে রাখা উচিত:
- সুদখোরের জানাজায় শরিক হওয়ার মাধ্যমে আমরা তার কৃতকর্মের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি না।
- সুদখোরের জানাজায় শরিক হওয়ার মাধ্যমে আমরা তার কৃতকর্মকে ক্ষমা করার দাবিও করছি না।
সুতরাং, সুদখোরের জানাজায় শরিক হওয়ার ব্যাপারে প্রত্যেকের নিজের বিবেচনা ও বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে।
সুদ খেলে কি নামাজ হবে
ইসলামে সুদকে হারাম বলা হয়েছে। সুদ খাওয়া অত্যন্ত গুনাহের কাজ। সুদ খাওয়ার কারণে নামাজ কবুল হয় না।
হাদিসে বলা হয়েছে,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুদ খায়, সে যেন তার নামাজের মধ্যে ভুঁড়ি খেয়ে ফেলে।’ (বুখারি, মুসলিম)
সুদ খাওয়ার কারণে মানুষের অন্তরে কৃপণতা, স্বার্থপরতা এবং অন্যায়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এতে মানুষের ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। সুতরাং, সুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কর্তব্য।
সুদ খাওয়ার কারণে নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ হলো, সুদ খাওয়া একটি অন্যায় কাজ। আর অন্যায় কাজের মাধ্যমে কৃত ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। সুদ খাওয়ার কারণে মানুষের অন্তর আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যায়। ফলে তার ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হয় না।
সুতরাং, সুদ খাওয়া থেকে বিরত থেকে নামাজ কবুল হওয়ার পথ সুগম করা উচিত।