বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম. আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে আল্লাহ আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন
Table of Contents
আল্লাহ আমাদের কেন সৃষ্টি
আল্লাহ আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন, এই প্রশ্নের উত্তর কেবল এক কথায় বলা সম্ভব নয়। এর ব্যাখ্যায় বিভিন্ন দিক বিবেচনা করা প্রয়োজন।
আল্লাহ আমাদের কেবল ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেননি, বরং জ্ঞান অর্জন, পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা, পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রমাণ করা, এবং আল্লাহর রহমত ও ভালোবাসা উপভোগ করার জন্যও সৃষ্টি করেছেন।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে
- আল্লাহর ইবাদতের জন্য: সুরা জারিয়াত, আয়াত: ৫৬-এ আল্লাহ বলেন, “আমি জিন ও মানবজাতিকে শুধু আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।”
- জ্ঞান অর্জনের জন্য: সুরা আল-মু’মিন, আয়াত: ৩৯-এ আল্লাহ বলেন, “তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে জ্ঞান দান করেছেন।”
- পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে: সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ৩০-এ আল্লাহ বলেন, “আমি আমার ফেরেশতাদের বললাম, ‘আদমকে সিজদা করো।’ তখন তারা সকলেই সিজদা করল, কিন্তু ইবলিস সিজদা করল না।”
- পরীক্ষার জন্য: সুরা আল-মুলক, আয়াত: ২-এ আল্লাহ বলেন, “তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সত্য ও মিথ্যা দ্বারা পরীক্ষা করার জন্য।”
অন্যান্য দিক
- আল্লাহর রহমতের প্রকাশ: আল্লাহর অসীম রহমতের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমাদের সৃষ্টি।
- ভালোবাসার বিনিময়: আল্লাহ আমাদেরকে ভালোবাসেন এবং আমাদের কাছ থেকেও ভালোবাসা চান।
- জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া: আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে আমরা জীবনের অর্থ খুঁজে পাই।
মনে রাখা প্রয়োজন
- আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাই আমাদের উচিত তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।
- আমাদের উচিত আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করা।
- আমাদের উচিত আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করা।
মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয় কারণ
- আল্লাহ তাকে জ্ঞান দান করেছেন: জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা। জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারে, নতুন নতুন আবিষ্কার করতে পারে এবং নিজের জীবনকে উন্নত করতে পারে।
- আল্লাহ তাকে বিবেক দান করেছেন: বিবেকের মাধ্যমে মানুষ সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। বিবেকের মাধ্যমে মানুষ ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্যের ধারণা লাভ করে।
- আল্লাহ তাকে কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছেন: কথা বলার ক্ষমতার মাধ্যমে মানুষ তার চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারে।
- আল্লাহ তাকে হাত দিয়েছেন: হাতের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন কাজ করতে পারে, যেমন লেখা, খাওয়া, কাজ করা ইত্যাদি।
- আল্লাহ তাকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা দিয়েছেন: সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতার মাধ্যমে মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা দেখায়।
- আল্লাহ তাকে পৃথিবীর প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করেছেন: পৃথিবীর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষের দায়িত্ব হলো পৃথিবীকে পরিচালনা করা এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পৃথিবীতে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখা।
আরবিতে বলা হয়:
- أشرف المخلوقات (আশরাফুল মাখলুকাত) – যার অর্থ “সৃষ্টির সেরা”
- خليفة الله في الأرض (খালিফাতুল্লাহ ফিল আরদ) – যার অর্থ “পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি”
উল্লেখ্য যে, মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হলেও, মানুষের অনেক দুর্বলতাও রয়েছে। মানুষ ভুল করতে পারে, পাপ করতে পারে। তাই মানুষের উচিত তার জ্ঞান, বিবেক, কথা বলার ক্ষমতা, হাত, এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করা।